ফেসবুকে ধনীদের টার্গেট করে প্রেম, বাসায় ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল

মোঃ সেলিম কবির॥
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ একটি প্রতারক চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. আল মাহমুদ ওরফে মামুন, মো. আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান। অভিযানে তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণকাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন ও দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

তাদের হাতে প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে তাদের গ্রেফতার করে র‍্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

র‌্যাব জানায়, ফেসবুকে উচ্চবিত্ত ও ধনীদের আইডি টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করত প্রতারক চক্রটি।প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত দুই বছরে বাসায় ডেকে প্রায় ৫০ জন ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেন বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূলহোতা ও দুই নারীসহ সাতজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী র‍্যাব-১ এ অভিযোগ করেন, গত ২২ জুলাই ভুক্তভোগীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট ভুক্তভোগীকে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান। রুমের ভেতরে প্রবেশ করার পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন।

‘পরে এসব ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা আদায় করে এই চক্র। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ওই সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে আবারো আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভুক্তভোগীর কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা ২ লাখ টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।’

র‌্যাব জানায়, এ সময় ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে র‍্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেন বলেন, গ্রেফতাররা অভিনব প্রতারণা চক্রের সদস্য। এই চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন এবং তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এ দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

‘ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে গেলেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্য সদস্যরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করত। এ কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি গত দুই বছরে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে আসছিলেন।’

চক্রের ওই দুই নারী সম্পর্কে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমেনবলেন, তানিয়া আক্তার হচ্ছেন আল মাহমুদ ওরফে মামুনের স্ত্রী। তারা দুজন পরিকল্পিতভাবে এই কাজে নেমেছেন। আর মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

পুলিশের চাকরি খাওয়া ও থানা জ্বালানোর হুমকি দিয়েছিল ‘সমন্বয়করা’

পুলিশের চাকরি খাওয়া ও থানা জ্বালানোর হুমকি দিয়েছিল ‘সমন্বয়করা’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাবেক নারী সংসদ সদস্যের গুলশানের বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার নেতাদের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। ২৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় যখন গুলশান থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে যায়, তখন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বেশ উগ্র আচরণ করছিল তারা। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের চাকরি খেয়ে দেওয়া এবং গ্রেপ্তারের পর যখন তাদের হ্যান্ডকাফ পরানো হচ্ছিল, তখন সমন্বয়করা থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন বাড়ির দারোয়ান এবং অপারেশনে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ সদস্য।

গুলশানের সেই বাড়ির দারোয়ান হান্নান বলেন, ‘যখন তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সমন্বয়করা পুলিশের চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল।’

গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার করে যখন তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হচ্ছিল, তখন তাদের আচরণ ছিল বেশ উগ্র। তারা নিজের লোকজন ডেকে থানায় আগুন দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছিল।’ যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান।

গত ২৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পাঁচ নেতা। গতকাল তাদের মধ্যে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানকে (রিয়াদ) ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। বাকি একজনের বয়স ১৬ বছর হওয়ায় তাকে শিশুকিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। তবে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশের কাছে শনিবার রাত থেকেই গুলশান ও আশপাশের এলাকার অনেকেই ফোন কলে আরও চাঁদাবাজির অভিযোগ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে গুলশান, বাড্ডা, বনানী এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই ফোন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তাদের লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

চাঁদাবাজির অভিযোগে শনিবার মধ্যরাতেই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই সকালে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ এবং কাজী গৌরব ওরফে অপু তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে বাসায় গিয়ে তার কাছে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। তিনি ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন। পরে বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা এবং তার ভাইয়ের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা তাদের দুজনকে দেন। শনিবার বিকেলে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বাসায় গিয়ে আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে জাফর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে এবং পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিয়াদসহ পাঁচ জনকে আটক করে। তবে অপু পালিয়ে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ের একটি নথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিয়াদের এ পরিচয় দিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। রোববার এসব সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এমন দাবি সঠিক নয়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার পথেই হাঁটছে বকশীগঞ্জের সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা