১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১১:০৬ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বীমা আইন মানছে না শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত নিয়মিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ না করে আইন ভঙ্গ করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বশেষ নিয়মিত সিইও ছিলেন অজিত চন্দ্র আইচ। তিনি ২০২০ সালের ২৬ জুন পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর ওই দিনই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা রাশেদ বিন আমানকে ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি দুই বছর চার মাস অতিক্রম করেছেন। অথচ বীমা আইন অনুসারে তিন মাসের অধিক ভারপ্রাপ্ত সিইও রাখার বিধান নেই। তবে অত্যাবশ্যকীয় হলে তা সর্বোচ্চ আরও তিন মাস বৃদ্ধি করা যায়। অর্থাৎ আইন অনুসারে ছয় মাসের বেশি কোনোভাবেই ভারপ্রাপ্ত সিইও দিয়ে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ একজন যোগ্যতাসম্পন্ন সিইও নিয়োগ দিবেন।
এরপরও যদি কোম্পানি নিয়মিত সিইও নিয়োগে ব্যর্থ হয় তবে সেখানে প্রশাসক বসাতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এক্ষেত্রে প্রশাসকের বেতন-ভাতা আইডিআরএ নির্ধারণ করে দিলেও কোম্পানিকেই তা প্রদান করতে হবে। কিন্তু রাশেদ বিন আমান নির্ধারিত তিন মাস পেরিয়ে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে সোমবারও (১৩ নভেম্বর) সিইও হিসেবে রাশেদ বিন আমানের নাম দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর নিয়ম ভঙ্গ করে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স বীমা খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক তথ্য দিচ্ছে।
নিয়মিত সিইও নিয়োগ না দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসার আগেই কোম্পানি পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর কোনো সতর্কতা বা জবাবদিহিতার মুখে না পড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনও পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো আইন লঙ্ঘন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি কোম্পানির পক্ষ থেকে একাধিকবার বীমা আইন ভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে— পরিচালকদের শেয়ার ধারণে অনিয়ম, সম্পদ বিনিয়োগের বিধান লঙ্ঘন। বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬ অনুসারে কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা একক অথবা যৌথভাবে এবং কোনো প্রতিষ্ঠান বীমা কোম্পানির শতকরা ১০ (দশ) ভাগের অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। (এক্ষেত্রে আইন অনুসারে পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বামী বা স্ত্রী, পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন, পুত্রবধূ, জামাতা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই গণ্য হবেন)।
কিন্তু বিনিয়োগকারী সূত্র ও সোনালী লাইফের প্রসপেক্টাস থেকে দেখা যায়, উদ্যোক্তা হিসেবে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তাফা গোলাম কুদ্দুস, তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, দুই কন্যা ও দুই জামাতাসহ পরিবারের মোট শেয়ার ধারণের হার ২৪.৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ৫.৬৪ শতাংশ, স্ত্রী ফাজলুতুন্নেছা ১.৫২ শতাংশ, দুই কন্যা তাসনিয়া কামরুন আনিকা ২.৫৩ শতাংশ ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ৫.৯৬ শতাংশ, দুই জামাতা রাশেদ বিন আমান ০.২৩ শতাংশ ও শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল ৩.৫৮ শতাংশ, পুত্র মোস্তফা কামরুস সোবহান ০.৬৩ শতাংশ এবং পুত্রবধূ সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর ৪.৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার তিন বছরের জন্য লকইন থাকায় তিন বছরের মধ্যে এই শেয়ার বিক্রয় বা হস্তান্তর করারও কোনো সুযোগ নেই। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ বিনিয়োগ নিয়মানুসারে সরকারি খাতে নির্ধারিত পরিমাণ বিনিয়োগ করেনি বলে জানা গেছে। বীমা আইনে জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ বিধিতে মোট সম্পদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শুধু সরকারি সিকিউরিটিজেই বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সোনালী লাইফ মোট সম্পদ ১৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বিপরীতে এই খাতে বিনিয়োগ করেছে মাত্র পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আর মোট বিনিয়োগ ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অথচ শুধু সরকারি খাতেই ৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা ছিল।
একাধিকবার চেষ্টা করেও সোনালী লাইফের সিইও রাশেদ বিন আমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply