
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:
মৌলভীবাজারের রাজনগরে এক নারীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করে অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হলেও, পরবর্তীতে ময়নাতদন্তে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়ায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ঘটনার চার মাস পর রাজনগর থানা পুলিশ মো. খলিল মিয়া ওরফে ফেছাদ (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত মো. খলিল মিয়া ওরফে ফেছাদ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে গলা টিপে ভিকটিমকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চ সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে সময় রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের শাহানা বেগমকে (৫১) নিজ ঘরে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধারের সময় নিহতের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি স্বাভাবিক মৃত্যু ও কারো উপর কোন সন্দেহ নেই বলে পুলিশকে জানান। তারপরও পুলিশ নিহত নারীর মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে ১ এপ্রিল রাজনগর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়।
সম্প্রতি শাহানা বেগমের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সদর হাসপাকাল থেকে রাজনগর থানায় প্রেরণ করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় ভিকটিম শাহানা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ তথ্য পেয়ে নিহতের মেয়ে বিউটি বেগম রাজনগর থানায় হত্যা মামলা (নং-০৪, তারিখ: ০৪/০৮/২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড) দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় রাজনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অরূপ অরূপ সরকারকে। তিনি মামলাটির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একই গ্রামের খলিল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে জানান, নিহত শাহানা বেগম এলাকায় মানুষের কাছে সুদে টাকা লেনদেন করতেন। তার সাথেও শাহানা বেগমের সুদে টাকা লেনদেন ছিল। মূলত এই টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে শাহানা বেগমের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। ঘটনার দিন রাতে খলিল মিয়া শাহানা বেগমের বাড়িতে যায়। সেখানে টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে খলিল মিয়া শাহানা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপর ফেলে গলায় চাপ দিয়ে হত্যা করেন।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘এ মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এ হত্যা ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করলে জানতে পারব। গ্রেপ্তারকৃত খলিল মিয়াকে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’