
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম মহানগরের ফিশারীঘাট এলাকা দীর্ঘদিন ধরে মাদক, ভেজাল মদ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অপরাধ সাম্রাজ্যের মূল নিয়ন্ত্রক দুইজন ব্যক্তি— কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাগর দাশ এবং মাদক সম্রাট মৃত অনুপ বিশ্বাসের স্ত্রী রমা বিশ্বাস। সাগর দাশের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা, বিপুল সম্পদের মালিকানার অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্থানীয় যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ অপরাধের তথ্য।ফিশারীঘাটের বাসিন্দাদের কাছে সাগর দাশ অপরিচিত নাম নয়। কৈশোর থেকেই ক্যাডার রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাগরের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক চাঁদাবাজি, মাদক পাচারের মামলা।তৎকালীন সময়ে র্যাবের তালিকাভুক্ত আসামিও ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে র্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মুক্তি পান। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও ভেজাল মদের ব্যবসার মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এবং চট্টগ্রাম নগরে একাধিক ভবন ও সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
অন্যদিকে মৃত অনুপ বিশ্বাসের স্ত্রী রমা বিশ্বাস বর্তমানে ফিশারীঘাট এলাকায় “মাদক সম্রাজ্ঞী” হিসেবে পরিচিত। সাগর দাশ জানায় চট্টগ্রাম নগরে রমার নামে ১০ থেকে ১২টি বহুতল ভবন, একাধিক জমি ও বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।ভারতে রয়েছে একাধিক সম্পত্তি, পাশাপাশি দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়েছেন তিনি।মূলত ভেজাল মদ ও ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তিনি নিয়মিত মদ ও ইয়াবা সেবন করেন, এবং বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত।লোকমুখে প্রচলিত আছে, অনুপ বিশ্বাস সরল মনে সাগর দাশকে ব্যবসার সাথে যুক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে স্ত্রী রমা বিশ্বাস ও সাগরের অবৈধ সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসলে পরিবারে নেমে আসে অশান্তি।স্থানীয়দের মতে, রমা বিশ্বাসের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।এসব কারণে দাম্পত্য জীবনে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো।দীর্ঘদিনের হতাশা ও দুঃখে অনুপ বিশ্বাস মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন।লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় তার।প্রতিবেদককে সাগর দাশ জানান—“রমা বিশ্বাসের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। আমার এক কর্মচারীর মাধ্যমে প্রাপ্য পাঁচ লাখ টাকা লুট করে নিয়েছেন। ওই কর্মচারী এখনো পলাতক। রমা বিশ্বাস সবকিছুর পেছনে জড়িত।”তিনি আরও অভিযোগ করেন, রমা বিশ্বাস রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।ফিশারীঘাট এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি, সাগর দাশ ও রমা বিশ্বাসের মাদক সাম্রাজ্যের কারণে শত শত যুবক ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে তারা বহাল তবিয়তে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।চট্টগ্রামের ফিশারীঘাট এলাকার এই কুখ্যাত মাদক সাম্রাজ্য নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ সম্পদ জব্দ এবং মাদক সাম্রাজ্য ধ্বংস করা না গেলে এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসের ভয়াবহতা আরও বেড়ে যাবে।সাগরদাস আরো জানান রমা বিশ্বাস ঘন ঘন ভারতে যাতায়াত করেন এবং সেখানে পালিয়ে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের অর্থ পাচার করেন। এ বিষয়ে একটি কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে রক্ষিত আছে।