নির্বাচনের আগে এসপির পদায়ন লটারির মাধ্যমে, ডিসি নয়

নির্বাচনের আগে এসপির পদায়ন লটারির মাধ্যমে, ডিসি নয়

ডেস্ক রিপোর্ট:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়ন হবে লটারির মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ন করা হবে না। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কখনো, কোনো দিন লটারির মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে পদায়ন হয়নি। এখনো হচ্ছে না, হবে না।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, এখন অভিযোগের বিপরীতে তাদের (ডিসি) প্রত্যাহার করা হচ্ছে, আমাদের ফিট লিস্ট আছে। মাঝে কিছু (নতুন ডিসি পদায়ন) হয়েছে, সামনে আরও হবে। আর যেখানে স্ট্যাবল আছে যেমন যুগ্ম সচিব (ডিসি) অনেক আছেন, আমরা নির্বাচনের আগে যুগ্ম সচিবদের তুলে আনব। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন সচিব।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হচ্ছে, হোমওয়ার্ক ভালো থাকলে যে দিনটাকে কেন্দ্র করে কাজটা করা হচ্ছে, সে দিনটা ভালো হবে, কোনো সমস্যা হবে না। এর আগে গত ৬ আগস্ট জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির দিকনির্দেশনামূলক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমার হাতে এসপি ও ওসিদের বদলি-পদায়নের ক্ষমতা রয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে বদলি ও পদায়ন করা হবে। এখানে সচিবালয় সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও লটারিতে উপস্থিত রাখা হবে।

চাকুরি দেয়ার নামে দেড় বছরে হাতিয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার॥

প্রতিষ্ঠানের নাম আছে, মুঠোফোনে অস্তিত্বও আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কিছুই নেই। তবে বিভিন্ন সময় নাম সর্বস্ব পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চক্রটির টার্গেট বড়লোক বা খুব বেশি শিক্ষিতরা নয়। ৮ম থেকে এইচএসসি পাস করা বেকার তরুণ-তরুণীদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

নোয়াখালীর মজিবুর রহমান চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন ২০০৮ সালে। ওই সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। অফিসের কাজের পাশাপাশি বসের এমন প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করতেন তিনি। সেখান থেকেই প্রতারণার এই কৌশল রপ্ত করেন। পরে নিজেই খুলে বসেন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। একে একে গড়ে তোলেন ৩০টি প্রতারণার প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সাইবার মনিটারিং টিমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. মজিবুর রহমান, তার দুই নারী সহযোগী লাবনী আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদৌস ময়না। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল, বিভিন্ন কোম্পানির ৬০টি সিম কার্ড, চাকরি প্রার্থীদের ৪০টি জাতীয় পরিচয় পত্র, ১৪৮টি বায়োডাটা ও ৩০টির বেশি ভুঁইফোড় কোম্পানি ও এনজিওর নামে তৈরি করা নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প ও সিল জব্দ করা হয়।

রেজাউল করিম বলেন, চাকরি প্রার্থী সংগ্রহে অভিনব কৌশল অবলম্বন করতেন চক্রটি। মজিবুর রহমান প্রথমে পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনে ইমেলের মাধ্যমে আবেদন আবেদন সংগ্রহ করতেন। এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে টাকার বিনিময় চাকরি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তন্ত (সিভি) সংগ্রহ করতেন। তার টার্গেট প্রতিমাসে ২০০ চাকরি প্রত্যাশীর নিয়ে কাজ করা।

পরে নারী সহযোগীদের প্রাথমিক বাছাই প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করা। আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছেন। এখন কিছু টাকা দিয়ে চাকরি কনর্ফম করুন। কিছুদিন পরে আবার আরেকটি ফোন নম্বর থেকে একই প্রার্থীকে ফোন করে বলা হয়। আপনাকে খুব শিগগিরই যোগদান করতে হবে। কিন্তু আপনাকে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও ল্যাপটপ আছে কিনা। না থাকলে, দুই হাজার টাকা পাঠান কেনার জন্য বাকি টাকা বেতন থেকে সমন্বয় করা হবে। টাকা নেওয়ার পরে ওই ফোন নম্বর বন্ধ করে দেন চক্রটি।

চক্রের প্রধান মজিবুর রহমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি সিভি ১০০ টাকা দিয়ে কিনতেন। পরে নারী সহযোগীরা ফোন করে চাকরি প্রার্থীর থেকে টাকা আনতে পারলে পেতেন ২০০ টাকা। চক্রটি গত ১০ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। আর পাঁচ বছরে ২৫ হাজার সিভি সংগ্রহ করে তারা। এরমধ্যে শেষ দেড় বছরে ছয় হাজার ৯৬২ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে এক কোটি ৮৭ লাখ ছয় হাজার ২১৭ টাকা আত্মসাত করেছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি। আগের লেনদেনের হিসাব পেলে এই পরিমান আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংস্থাটি।

এসএসপি রেজাউল মাসুদ বলেন, নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, করোনা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্রের নামে অফিস খুলে বিভিন্ন পত্রিকায় ভুঁইফোড় কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত চক্রটি। সেখান থেকে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করত তারা। এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার অসংখ্য যুবক প্রতারিত হয়েছে। এ বিষয়ে সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) একটি অভিযোগ আসলে, অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, একজন চাকরি প্রত্যাশীর আকর্ষণ করতে যা করা লাগে, সব করত চক্রটি। টাকার পরিমাণ কম হলেও গ্রাহক বেশি। এছাড়া অভিযোগ কারীর সংখ্যা কম। অল্প টাকা প্রতারিত হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে না। আর সেই সুযোগটা নিয়েছেন চক্রটি। কিন্তু তার কাছে এটা বিরাট অংকের টাকা হয়ে দাঁড়ায়।

এর আগেও মজিবুর রহমান বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারও হয়েছেন কয়েকবার। তবে জেল থেকে বের হয় আবার একই প্রতারণার কাজে করেন মজিবুর। আর এই ঘটনায় প্রতারণা চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম