টিকটকের রমরমা বাণিজ্যে দিশেহারা তরুণ সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার॥

বাংলাদেশে ‘টিকটক’ অ্যাপের ব্যবসা বাড়াতে হঠাৎ করেই দেশের শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে শুরু করা হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। নাচ-গান-সিনেমার সংলাপ কিংবা রান্নার রেসিপিও মিলছে টিকটক ভিডিওতে। তবে, টিকটকের অশ্লীল ভিডিও, মাদক সেবনসহ আপত্তিকর বিভিন্ন ভিডিওর কারণে যখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো টিকটককে একে একে বন্ধ করা শুরু করেছিল, সেই নিষেধাজ্ঞা কী করে অতিক্রম করল টিকটক? অনুসন্ধানে জানা যায়, বড় অঙ্কের লেনদেনে বাংলাদেশে নির্বিঘে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে টিকটক। এ দেশে টিকটকের রমরমা বাণিজ্যে দিশেহারা যুবসমাজ।

রুচিহীন ভিডিও দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে নিজের পরিচিতি পাওয়ার প্রবণতাকে ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা বলছেন মনোবিদরা। টিকটক একদিকে যেমন অশ্লীল রুচিহীন কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি করছে মানসিক বৈকল্য।

গুলশানে এক রিকশাচালক বাসের সঙ্গে পাল­া দিয়ে রিকশা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যেও মোবাইল ফোনে সচল রেখেছেন টিকটক অ্যাপ। রিকশা চালাচ্ছেন আর পছন্দের গানের সঙ্গে ক্রমাগত মুখোভঙ্গি করে ঠোঁট মিলিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিওটি আপ হলে লাইক, শেয়ারের বন্যা বইবে বলে ধারণা তার। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করতে গিয়ে ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনা।

২০১৬ সালে চীনে টিকটকের জন্ম হলেও সেখানে এখন এটির ব্যবহার অনেক কম। অথচ বাংলাদেশে এই অ্যাপটি জনপ্রিয়তায় এক নম্বরে।

সামাজিকমাধ্যমে লেখালেখি করা রাজীব নূর বলেন, আমি গত দুই মাস ধরে নিয়মিত এক ঘণ্টা করে টিকটক দেখেছি। অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। টিকটক অন্য এক দুনিয়া। ইয়াবার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় টিকটক নেশা। দুই-একটা উদাহরণ আমি দিচ্ছি। একজন বয়স্ক লোক টিকটক করছেন। পঞ্চাশের উপরে তার বয়স। লাল চুল, লাল দাড়ি। নাগিন নাচ দিয়ে এই লোক টিকটক করছেন। অতি কুৎসিত তার অঙ্গভঙ্গি। কোনো রুচিশীল মানুষ এরকম অঙ্গভঙ্গি করতে পারে না।

আরেকজন আছে এরকম বদ টিকটকার। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী দাদা বিছানায় শুয়ে আছেন। দাদার জীবন যায় যায় অবস্থা। টিকটকার অসুস্থ দাদার চার পাশে ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে টিকটক করছে। সে প্রচুর লাইক পেয়েছে। তার ফলোয়ারও প্রচুর। কথা হলো এখানে এত লাইক দেওয়ার কী আছে? কারা এখানে লাইক দিচ্ছে? ছেলেটা বাজে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এই টিকটক প্রজন্ম পাগল হয়ে গেছে। রিকশায় টিকটক করছে, বাথরুমে টিকটক করছে, বাস, গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, ফাস্টফুডের দোকান, শপিংমল, ফুটপাত, রান্নাঘর, অফিস, বারান্দা, পার্ক, বাইক এমন কোনো জায়গা বাদ নেই যেখানে টিকটক করছে না। এটা অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণ। এই প্রজšে§র ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা কি দেখছে না? কোন দিকে যাচ্ছে তাদের সন্তান? এদের ভবিষ্যৎ কী? এদের কথা কেউ ভাবছে না কেন?

ফেরদৌস আল মোত্তাকিন এবং টিকটক : ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি বগুড়া জেলার ফেরদৌস আল মোত্তাকিনকে টিকটকের হেড অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশন্স অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয় কোম্পানিটি। মূলত বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে টিকটকের হয়ে সুসম্পর্ক তৈরি করে, নিষিদ্ধ হওয়া ঠেকানো এবং ইতিবাচক প্রচারণা বাড়িয়ে টিকটক কোম্পানির ব্যবসা বাড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। দুবাই অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত ফেরদৌস আল মোত্তাকিন চাকরির সুবাদে পরিবারসহ থাকছেন সেখানে।

সম্প্রতি সমালোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে নতুন করে টিকটক ব্যবসা চাঙ্গা করতে বিভিন্ন দপ্তরে মোটা অঙ্কের টাকা দিচ্ছে কোম্পানিটি। যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার এই অ্যাপটি এ দেশে যেন বন্ধ করে দেওয়া হয় তার দাবি উঠেছে সচেতন মহলে।

ফেরদৌস আল মোত্তাকিনের সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরলেও টিকটকের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

কে এই ফেরদৌস আল মোত্তাকিন? আর কেনইবা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে টার্গেট বানিয়ে দেশে দেশে গিয়ে টিকটকের হয়ে নীতিনির্ধারকদের বাগে আনার দায়িত্ব দেওয়া হলো তাকে?

বগুড়া সদরের জহুরুল নগরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ফেরদৌস মোত্তাকিন ওরফে তুশার ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এমন অভিযোগ করেছেন বগুড়ার স্থানীয় জনগণ। বগুড়ার বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, ভিওআইপি ব্যবসার অবৈধ টাকা দিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অ্যাস্যুরেন্স সিটি অ্যাপার্টমেন্টে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে একাধিক এফডিআর করেন ফেরদৌস আল মোত্তাকিন। আফ্রিকার একটি মোবাইল কোম্পানি জিএসএমএ’তেও চাকরি করতেন তিনি। হঠাৎ করে তার শত কোটি টাকার মালিক হওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্সি ‘ভিসাথিং’-এর চেয়ারম্যান ফেরদৌস মোত্তাকিন আদম ব্যবসার সঙ্গেও জড?িত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘রোমানিয়া ইনফরমেশন হেল্প ফর বাংলাদেশি’ নামের একটি প্রাইভেট গ্র“পে ফেরদৌস আল মোত্তাকিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিসাথিং-এর প্রতারণা ও জালিয়াতি নিয়ে লাইভ প্রচার করা হয় গত ১১ জুন, ২০২৩ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন-টুয়াবের সদস্য (সদস্য নং-২৬১) ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আদম ব্যবসা ও প্রতারণার অভিযোগ মেলে। ফেরদৌসের অবৈধ সম্পদের তদন্ত চান ভুক্তভোগীরা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব

স্টাফ রিপোর্টার:

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১৪ মার্চ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। তাদের এই পরিদর্শন বাংলাদেশে বার্ষিক রমজান সংহতি সফরের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে।

পরিদর্শনকালে গুতেরেস স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারে নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করবেন। যা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বাংলাদেশের উদারতার স্বীকৃতি।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা ১৪ মার্চ সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরবেন।

রমজানের প্রতি সংহতি সফরের অংশ হিসেবে অ্যান্তোনিও গুতেরেস ১৩ থেকে ১৬ মার্চ ঢাকা সফর করবেন। এসময় তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

বাংলাদেশ সফরকালে তিনি ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি সুশীল সমাজের তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন।

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে এক দশকের দীর্ঘ মেয়াদে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাস্তুচ্যুত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে নিয়মিত রমজান পালন করার জন্য সংহতি সফরকে একটি বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত করেছেন গুতেরস।

গুতেরেস এক বার্তায় বলেন, “প্রতি রমজানে আমি বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি সফর করি এবং রোজা রাখি। এই মিশন বিশ্বকে ইসলামের আসল চেহারা মনে করিয়ে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “রমজান করুণা, সহানুভূতি এবং উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। এটি পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ। আমি সবসময় এই মৌসুমে অসাধারণ শান্তির অনুভূতিতে আরও অনুপ্রাণিত হই।”

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সম্প্রতি ড. ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে আশা প্রকাশ করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বৈশ্বিক অগ্রাধিকারকে নবায়ন করবে এবং তাদের দুর্দশার বৃহত্তর সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।

গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করতে তার তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।

তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ মিয়ানমারের সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে আমি আমার সদিচ্ছা অব্যাহত রাখব। সেই লক্ষে আঞ্চলিক পক্ষ, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব রাখাইনের জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবিকার সহায়তা কীভাবে সর্বোচ্চ করা যায়-সে বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমগুলোকে দিকনির্দেশনা দিতে তার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের অনুরোধ করেছেন।

জাতিসংঘ মিয়ানমারের সমন্বয়কারী এবং আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারীর সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিখার দেবে। যার মাধ্যমে রাখাইন এবং পুরো মিয়ানমারে অভাবী লোকদের জন্য জরুরি ত্রাণ, নিরাপদ, দ্রুত, টেকসই এবং অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়।তিনি বলেন, “জাতিসংঘ ব্যবস্থা কীভাবে প্রক্রিয়াটিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করতে পারে-তা বোঝার জন্য আমরা সদস্য রাষ্ট্রের পরামর্শের পরে সম্মেলনের সম্মত ফলাফল এবং পরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করছি।”

তিনি চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসকে তার চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানান। যেটি ৭ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান তার কাছে পৌঁছে দেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সংহতি এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব এবং রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তিনি।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম