আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২৮১ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আর এই প্রক্রিয়ার আড়ালে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আউটসোর্সিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ট্রাস্ট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। এই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, প্রতিটি পদের জন্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। সাইফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘টেকনিশিয়ান পদে চাকরির জন্য আমি এক কর্মকর্তাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাকরি পাইনি।’
এমন অভিযোগ আরও অনেকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীদের ভাষ্য, ইলেকট্রিক্যাল পদে ৩ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জন্য ২ লাখ, পাম্প চালকের জন্য আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘আমি ট্রাস্ট সিকিউরিটির কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন।’

এদিকে অনিয়মের অভিযোগের পরও ট্রাস্ট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ অনেককে নিয়োগপত্র দিয়ে বিভিন্ন জেলায় হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক লার উদ্দিন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।’

এদিকে অনিয়মের অভিযোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের উপপরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) আমিনুল ইসলাম প্রতিবেদনে জানান, দরপত্রে সব পদে আবেদনকারীর বয়সসীমা ১৮ থেকে ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। অথচ ২০১৮ সালের ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা’র ৩(১০) অনুচ্ছেদে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত আছে।

তদন্ত কমিটির মতে, মূল্যায়ন কমিটির এমন সিদ্ধান্ত নীতিমালাবিরোধী এবং এতে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে। দরপত্রে হরিজন সম্প্রদায় ও অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও, হরিজন না হলে শূন্য নম্বর এবং হলে ১৭ নম্বর দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও একইভাবে অসম মূল্যায়ন হয়েছে। হরিজন সনদগুলোতে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে ট্রাস্ট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের দাখিল করা অভিজ্ঞতার সনদপত্র। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের পক্ষ থেকে যেসব সনদ জমা দিয়েছে, তার সবই স্বঘোষিত। আল আরাফাত সার্ভিসেস (প্রা.) লিমিটেড ও স্টেট সার্ভিসেস লিমিটেড নামের দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা একই সময়ে একই পদে বিপুলসংখ্যক কর্মীর অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করেছে। আল আরাফাত সার্ভিসেস শুধু ‘লাকী বিল্ডার্স করপোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সনদের ওপর নির্ভর করেছে, যা সন্দেহজনক।

এ বিষয়ে হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের বিষয়টি প্রশাসন উইং দেখছে। এই নিয়োগে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগে অনিয়মের কিছু অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত যুব উন্নয়ন পরিচালক হামিদ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

স্বৈরাচারী আ.লীগ সরকারের পতনের পর ও থেমে নেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের দৌরাত্ম, গত ৫ ই আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পরও তাদের দোসররা এখনো রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে, সম্প্রতি গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ই লার্নিং এন্ড আর্নিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলম।

দেশের ৬৪ জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিতে সরকার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়, প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খানের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ও বিতর্কিতভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ই লার্নিং এন্ড আর্নিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান কাজ পায়।

প্রতিটি জেলায় ৬০০ জন করে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা ও ৩০০ টাকার খাবার পাবেন। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী উচ্চ মাধ্যমিক পাস কর্মপ্রত্যাশী নারী-পুরুষ এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল অথচ অনুসন্ধানে জানা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ভুয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

মাসুদ আলম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রীদের সাথে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা, তিনি ২০২২ সালে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ও ২০২৩ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পেয়েছে, একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ও ২০০১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কারণ তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা ছিল ও গত ৭ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুইদিন পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্টিকার যুক্ত গাড়িতে এক বস্তা (আড়াই কোটি টাকা) টাকা সহ আটক হন মাসুদ আলম এবং সেই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে এত তথ্য থাকার পরও ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান মাসুদ আলমের কাছ থেকে ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্য করে তাকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই তথ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন সাংবাদিককে হামিদ খান ম্যানেজ করে দেন, ইতিমধ্যে মাসুদ আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে ও তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অথচ পরিচালক হামিদ খানের কাছে সাংবাদিকরা গেলে তিনি মাসুদ আলমের প্রশংসা করেন কয়েকজন সাংবাদিককে হামিদ খান বলেন ভাই ব্রাদার মনে করে কাজ করেন নিউজ করে কি করবেন সুসম্পর্ক রাখেন লাভবান হবেন, মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গণমাধ্যমের সংবাদপ্রকাশ হওয়ার পরও অর্থের বিনিময়ে তা প্রত্যাহার করিয়াছেন আর এগুলোর মধ্যস্থতা করেছেন যুব উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক হামিদ খান।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পরিচালক হামিদ খান অনেক ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, তিনি অবৈধ অর্থে নিজের পরিবার ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন এবং তিনি অর্থছড়া কিছুই বোঝেন না ও মাসুদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কমিশন নিয়েছেন তিনি, মাসুদ আলম ফ্যাসিবাদের দোসর এই তথ্য তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপস্থাপন করেননি। আপনারা আরো ভালোভাবে অনুসন্ধান করুন তাহলে উনার আরো কুকীর্তি বেরিয়ে আসবে, যুব উন্নয়ন থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অবৈধ ভাবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী কর্মকর্তা মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে হামিদ খানের ঘনিষ্ঠতা ছিল সেই ধারাবাহিকতায় তিনি মাসুদ আলমের পক্ষে কাজ করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হামিদ খানের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম